১০ অক্টোবর থেকে যাত্রা করবে জাহাজগুলো
শাহেদ মিজান, সিবিএন:
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আটকে থাকা সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল নিষেধাজ্ঞা তোলে নেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তোলে নেয়ায় এই রুটে পর্যটকবাহী চলাচলে অনুমতি দিয়েছে নৌ-মন্ত্রণালয়। বিকল্প পথ নয় টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট হয়ে নিয়মিত পথেই জাহাজগুলো চলাচল করবে। ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার’র (টুয়াক) আহ্বায়ক এম.এ হাসিব বাদল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এম.এ হাসিব বাদল জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মায়ানামারের সাথে তিক্ত সম্পর্কের কারণে নিরাপত্তাজনিত হুমকির মুখে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই কারণে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও গত মাসেও এই রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগ্রহ নিয়ে আসলেও সেন্টমার্টিন যেতে পারেনি অনেক পর্যটক। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পথে জাহাজ চলাচল চালু করার জন্য টুয়াকের পক্ষ থেকে ২২ অক্টোবর নৌ-মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। বিকল্প পথ হিসেবে সাবরাং ও টেকনাফ বীচ দিয়ে পশ্চিম দিকে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয়েছিল। বিষয়টি আমলে নিয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসার কথা ছিলো। এই বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছিল। পরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে উদ্ভুত পরিস্থিতি বিবেচনায় আনেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি অনুকূলে ফিরে আসায় জাহাজ চলাচলের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তোলে নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের প্রেক্ষিতে জাহাজ চলাচলে অনুমতি দেন নৌ মন্ত্রণালয়। গতকাল ২ নভেম্বর নৌ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে নৌ মন্ত্রী শাহাজান খাঁন এই অনুমতি দেন। এতে টুয়াকের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং যুগ্ন সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ।
টুয়াকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাফ-উদ-দৌলা আশেক জানান, পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সেন্টমার্টিনের সাথে প্রতি বৎসর অক্টেবরের প্রথমদিকে টেকনাফ সেন্টমার্টিন নৌপথের মাধ্যমে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি বছর রোহিঙ্গার ইস্যুর কারণে ঠিক সময়ে জাহাজ চলাচলে অনুমতি মেলেনি।
তিনি আরো জানান, নাফনদী এবং বঙ্গোপসাগর মিলে চৌত্রিশ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিয়ে টেকনাফ থেকে জাহাজ সেন্টমার্টিন যাতায়াত করত। যাতায়াত পথে নাফনদীর মোহনায় একাধিক চর জাগায় জাহাজসমূহ কয়েকবার মায়ানমারের জলসীমার ভিতর প্রবেশের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন পৌঁছাত এবং একইভাবে ফেরত আসত। এতে নিরাপত্তা হুমকি চিহ্নিত করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর প্রেক্ষিতে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেন। এতে করে করে হতাশ হয়ে ফিরে গেছে অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক। অন্যদিকে পর্যটক যেতে না পারায় সেন্টমার্টিনের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলো চরম মন্দায় পতিত হয়। কোটি কোটি টাকা পুঁজির ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। এতে দ্বীপের বাসিন্দারা পর্যন্ত মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যা পতিত হয়ে যায়। শুধু তাই নয় পুরো কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে এর প্রভাব পড়ে যায়।
উদ্-দৌলা-আশেক বলেন, ‘জাহাজ চলাচলে নৌ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়া গেছে। তবে জেলা প্রশাসক আরো কয়েকটি স্থানীয় প্রক্রিয়াও রয়েছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী ১০ নভেম্বর নাগাদ জাহাজগুলো চলাচল শুরু করবে।’
টুয়াক আহবায়ক এম এ হাসিব বাদল বলেন, ‘জাহাজ চলাচল চালুর বিষয়ে টুয়াক দেড়মাস যাবত প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কাজ করেছি। আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। সব কিছু বিবেচনা করে নিয়মিত পথেই জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহাজ চলাচল শুরু হবে।’
জাহাজ অপারেটর প্রতিষ্ঠান কেয়ারী ট্যুরস্ এন্ড সার্ভিস লি. এর প্রধান নির্বাহী এম এম নোমান বলেন, ‘পর্যটন মৌসুম ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে জাহাজ চলাচল হয়নি। পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের জন্য অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে অনুমতি মেলায় তা কেটে গেলো। এতে পর্যটন ব্যবসায়ীসহ পুরো কক্সবাজারের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।